৩:৬০
اِنَّ مَثَلَ عِیۡسٰی عِنۡدَ اللّٰہِ کَمَثَلِ اٰدَمَ ؕ خَلَقَہٗ مِنۡ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَہٗ کُنۡ فَیَکُوۡنُ ﴿۶۰﴾
হে প্রিয় বন্ধুগণ, আসুন আমরা একসাথে বিচার করি কুরআনের এই মহান আয়াতটির গভীর অর্থ। আল্লাহর বাণী অতি সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সৃষ্টির রহস্য।
ঈসা ও আদমের সৃষ্টির তুলনা
“নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার উপমা আদমের ন্যায়; তিনি তাকে মাটি হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন, অতঃপর তাহাকে বলিলেন, ‘হও,’ সেই তখনই হইয়া গেল।”
এই পবিত্র আয়াতে আল্লাহ তাঁর অসীম ক্ষমতা ও রহমতের পরিচয় দিয়েছেন। যেমন তিনি আদমকে পিতা-মাতা ছাড়াই সরাসরি সৃষ্টি করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে হযরত ঈসাকেও পিতা ছাড়াই অলৌকিকভাবে জন্ম দিয়েছিলেন।
ঈসার মানবিক প্রকৃতি
এই আয়াত আহমদীয়দের বিশ্বাসকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে যে, হযরত ঈসা ছিলেন একজন মহান নবী এবং আল্লাহর বান্দা। তিনি কোনোভাবেই ঈশ্বর বা ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন না। তাঁর সৃষ্টি ছিল অলৌকিক, কিন্তু তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ।
এই আয়াত খ্রিস্টান ধর্মমতের ত্রিত্ববাদকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে এবং ঈসা আলাইহিস সালামের মানবিক প্রকৃতিকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
ঈসার নবুওয়াত ও মহিমা
অবশ্য, এই আয়াত হযরত ঈসার মর্যাদা ও নবুওয়াতের মহিমাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করে না। বরং এটি প্রমাণ করে যে, তিনি ছিলেন আল্লাহর একজন বিশেষ বান্দা যাকে অলৌকিকভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল মানবজাতিকে সৎপথ দেখানোর জন্য।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যীশুর অবতরণ
বাইবেলের উদ্ধৃতিগুলি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, যীশু ছিলেন আল্লাহর একজন মহান নবী এবং তাঁর ইচ্ছার প্রকাশ। তিনি ছিলেন না আল্লাহর সন্তান বা উপাসনার পাত্র। বরং তিনি ছিলেন আল্লাহর “কালাম” বা বাণী, যিনি মানবজাতিকে সত্যের পথ দেখিয়েছেন।
যীশু: আল্লাহর অলৌকিক বাণী
বাইবেলের উদ্ধৃতিগুলি যীশুকে “কালাম” বা বাণী হিসাবে চিত্রিত করেছে, যা তাঁর মানবিক প্রকৃতি এবং নবুওয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে। উদাহরণস্বরূপ:
“আদিতে কালাম ছিল, কালাম ছিল আল্লাহর সঙ্গে, আর কালাম ছিল আল্লাহ।” (যোহন 1:1)
“কালাম দেহধারী হলেন এবং আমাদের মধ্যে বাস করলেন।” (যোহন 1:14)
এই আয়াতগুলি স্পষ্টভাবে বুঝায় যে, যীশু ছিলেন আল্লাহর ইচ্ছার প্রকাশ এবং তাঁর বাণী, যিনি মানবদেহ ধারণ করেছিলেন।
যীশুর মানবিক প্রকৃতি
বাইবেলের অন্যান্য উদ্ধৃতিগুলিও যীশুর মানবিক প্রকৃতি এবং নবুওয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে। যেমন:
“আল্লাহ এমনভাবে জগতকে ভালবাসলেন যে, তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে দিলেন, যাতে যে কেউ তাঁতে বিশ্বাস করবে, সে নষ্ট না হয়, বরং অনন্ত জীবন লাভ করে।” (যোহন 3:16)
এখানে “পুত্র” শব্দটি আল্লাহর সাথে যীশুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তাঁর নবুওয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে, কিন্তু তা বাস্তবিক অর্থে নয়।
“অতীতে আল্লাহ নবীদের মাধ্যমে বহুবার ও বহুভাবে আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে বাণী পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু এই শেষ দিনগুলিতে তিনি আমাদের কাছে তাঁর পুত্রের মাধ্যমে বাণী পাঠিয়েছেন।” (ইবরানী 1:1-2)
এই আয়াতটি যীশুকে আল্লাহর শেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসাবে চিত্রিত করেছে, যিনি আল্লাহর বাণী প্রচার করেছিলেন।
সারসংক্ষেপ
সুতরাং, বাইবেলের উদ্ধৃতিগুলি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, যীশু ছিলেন একজন মহান নবী এবং আল্লাহর বাণীর প্রকাশ। তিনি ছিলেন না আল্লাহর সন্তান বা উপাসনার পাত্র। এই দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামী বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মতবাদের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই আয়াত আমাদের শেখায় যে হযরত ঈসা ছিলেন একজন মহান নবী এবং আল্লাহর প্রেরিত বান্দা, যিনি মানবজাতির কল্যাণার্থে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তাই আসুন আমরা সকলে মিলে এই মহান বাণীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই ।