সর্বশক্তিমান আল্লাহর সার্বভৌমত্ব

আহমদিয়াতের মূল ভিত্তি, যেমনটি ইসলামেও দেখা যায়, হল আল্লাহর পরম ও অপরিবর্তনীয় সার্বভৌমত্ব। এই ধারণাটি, যা তাওহিদ নামে পরিচিত, ইসলামের পুরো কাঠামোর ভিত্তি। এটি আল্লাহর একক, তুলনাহীন এবং সর্বোচ্চ কর্তৃত্বকে নির্দেশ করে, যা সমস্ত সৃষ্টির উপর প্রযোজ্য। কোনো শক্তি, তা মানবিক হোক বা প্রাকৃতিক, আল্লাহর আধিপত্যকে অতিক্রম করতে পারে না।কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গিকুরআন স্পষ্টভাবে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে নিশ্চিত করে। যেমন, সূরা আল-যুমার, আয়াত ৬৭: “আল্লাহর জন্যই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব, এবং যা কিছু তাদের মধ্যে আছে। তাই তাঁকে পূজা করো এবং তাঁর উপর নির্ভর করো।” আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কেবল তাত্ত্বিক নয়, এটি বাস্তবতার প্রতিটি দিককে স্পর্শ করে।আহমদিয়াতের অবস্থানআহমদিয়াত, ইসলামের একটি গতিশীল ব্যাখ্যা হিসেবে, এই ঐশ্বরিক সার্বভৌমত্বের বাস্তব প্রয়োগকে সমসাময়িক জীবনে জোর দেয়। এটি বলে যে মানবজাতি পৃথিবীর উপর অভিভাবকত্ব পেয়েছে, কিন্তু তাদের কর্তৃত্ব আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত এবং তাঁর আইন অনুযায়ী সীমাবদ্ধ। কোনো শাসক, যতই শক্তিশালী হোক না কেন, চূড়ান্ত কর্তৃত্ব দাবি করতে পারে না।ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক উদাহরণবিশ শতাব্দী, বিশেষ করে উপমহাদেশে, মানবিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার উদাহরণ দেয় যখন তা ঐশ্বরিক সার্বভৌমত্বের মুখোমুখি হয়। জুলফিকার আলী ভুট্টো, তার রাজনৈতিক দক্ষতা ও ক্ষমতা সত্ত্বেও, তার অবশেষ পতন রোধ করতে পারেননি। তার উত্তরসূরি, জিয়া-উল-হক, একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় একই রকম ভাগ্যবরণ করেন। এই ঘটনাগুলি কুরআনের উক্তি “মানুষের পরিকল্পনা শুধুমাত্র একটি [অস্থায়ী] পরিকল্পনা, এবং আল্লাহর পরিকল্পনা সর্বোত্তম” (সূরা আল-আনফাল, আয়াত ৩০) এর সত্যতা প্রমাণ করে।আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ও তীব্র নির্যাতনের শিকার হয়েছে। পাকিস্তানে আহমদিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র-সমর্থিত অত্যাচার, সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ আচরণ এবং সমাজে তাদের অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রমাণ করে যে সবচেয়ে দমনমূলক শাসনও তাদের কর্মের পরিণতি থেকে তাদের জনগণকে রক্ষা করতে পারে না।শাসনের জন্য প্রভাবআল্লাহর সার্বভৌমত্বের ধারণা শাসনের জন্য গভীর প্রভাব ফেলে। নেতারা, তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ধর্মীয় সম্পর্ক নির্বিশেষে, আল্লাহর কাছে চূড়ান্তভাবে দায়বদ্ধ। তাদের কর্তৃত্ব একটি আমানত, যা আল্লাহ দ্বারা প্রদত্ত, এবং এটি তাঁর আইন অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে। ঐশ্বরিক কর্তৃত্বকে ছিনিয়ে নেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য।মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রেক্ষাপটে, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিটি ব্যক্তির জন্য একটি অবিচ্ছেদ্য মর্যাদা এবং মূল্য নির্দেশ করে। কোনো সরকার বা ব্যক্তি অন্যের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। প্রকৃত ন্যায়বিচার, তাই, আল্লাহর আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং শাসকদের খেয়ালখুশির সাথে নয়।উপসংহারআল্লাহর সার্বভৌমত্ব ইসলাম, বিশেষ করে আহমদিয়াতে, বিশ্বাস ও শাসনের একটি মূল ভিত্তি। এটি এমন একটি নীতি যা সময় ও স্থান অতিক্রম করে। মানব নেতারা উঠতে ও পড়তে পারে, কিন্তু আল্লাহর কর্তৃত্ব চিরন্তন এবং অপরিবর্তনীয়। এই ধারণাটিকে বোঝা এবং অন্তর্ভুক্ত করা একটি ন্যায়সঙ্গত, সমতাপূর্ণ এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।মানুষের ইচ্ছাশক্তি থাকলেও, তাদের কর্মের এই পৃথিবী এবং পরকালে পরিণতি রয়েছে। চূড়ান্ত ন্যায়বিচার এবং পুরস্কার বা শাস্তি শুধুমাত্র আল্লাহর হাতে।

Leave a Comment