
আমাদের আধুনিক পৃথিবীতে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি এক অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ একটি বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি কোণায় প্রবেশ করেছে—আমাদের খাবার থেকে শুরু করে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যন্ত। এর ফলে, আমাদের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বাস্থ্যও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ইসলাম, বিশেষ করে আহমদিয়াতের দৃষ্টিভঙ্গিতে, এই সমস্যাগুলি আধ্যাত্মিক ও বাস্তবিক নির্দেশনার আলোকে মোকাবেলা করা অপরিহার্য।
পবিত্র কোরআন সৃষ্টির ভারসাম্য ও পবিত্রতা বজায় রাখার গুরুত্ব অত্যন্ত জোর দিয়ে উল্লেখ করেছে। আল্লাহ বলেন, “আর পৃথিবীতে শান্তির পর অশান্তি সৃষ্টি করো না, আর আল্লাহকে ভয় ও আশায় ডাকো। নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী” (কোরআন ৭:৫৬)। এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মানবজাতির দায়িত্ব হল পরিবেশ সংরক্ষণ করা এবং এমন কোনও কাজ না করা যা এর ক্ষতির কারণ হতে পারে। মাইক্রোপ্লাস্টিক, যা এখন আমাদের ঘর এবং দেহে ছড়িয়ে পড়েছে, সেই স্বর্গীয় ভারসাম্য থেকে একটি স্পষ্ট বিচ্যুতি, যা কোরআন আমাদের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা আমাদের পরিবেশগত দায়িত্বের উপর মূল্যবান নির্দেশনা প্রদান করে। তিনি পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দিয়েছেন, শুধু শরীরের নয়, আমাদের চারপাশের পরিবেশেরও। নবী করীম (সা.) বলেছেন, “পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ” (সহীহ মুসলিম)। এই পরিচ্ছন্নতার নীতিটি কেবল ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বৃহত্তর পরিবেশের মধ্যেও বিস্তৃত, যা মাইক্রোপ্লাস্টিকের মতো ক্ষতিকর দূষণ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। প্লাস্টিক পণ্যের নির্বিচার ব্যবহার ও পরিত্যাগ নবী করীম (সা.)-এর শিক্ষা, যা মধ্যপন্থী ও সরল জীবনের দিকে আহ্বান জানায়, তা থেকে একটি বিপথগামিতা।
আহমদিয়াত, প্রতিশ্রুত মসীহ হযরত মির্যা গুলাম আহমদ (আ.)-এর নেতৃত্বে, পরিবেশগত সুরক্ষার আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মাত্রাগুলির উপর ধারাবাহিকভাবে জোর দিয়েছে। প্রতিশ্রুত মসীহ (আ.) প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন এবং তাঁর অনুসারীদের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। আজকের প্রসঙ্গে, এই শিক্ষা আমাদের প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়, যেমন পুনঃব্যবহারযোগ্য বিকল্প গ্রহণ করা, মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ কমাতে পানির ফিল্টার ব্যবহার করা এবং প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোর লক্ষ্যে আইনগত ব্যবস্থাকে সমর্থন করা।
মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের কর্ম ও তার প্রভাব সম্পর্কে চিন্তা করার জন্য মানবজাতির প্রতি একটি সতর্কবার্তা। আহমদীয়া দৃষ্টিকোণ থেকে, এই সমস্যাটি মোকাবেলা করা কেবল শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নয়, বরং এটি আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি এবং নৈতিক দায়িত্বের বিষয়। প্লাস্টিক দূষণ কমানোর প্রতিটি প্রচেষ্টা একটি ইবাদত, পৃথিবীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের কর্তব্য পালন করার একটি ধাপ।
সবশেষে, ইসলামের শিক্ষা, যা আহমদিয়াত পুনরুজ্জীবিত করেছে, আমাদেরকে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয়। পরিবেশবান্ধব চর্চা গ্রহণ করে এবং শক্তিশালী পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানিয়ে আমরা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে স্থাপিত সেই ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করতে পারি। কোরআনে বলা হয়েছে, “আসমানকে তিনি সমুন্নত করেছেন এবং তিনি ধার্য করেছেন ওজন। তোমরা যেন ওজনে অন্যায় না কর” (কোরআন ৫৫:৭-৮)। এই স্বর্গীয় ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের পৃথিবী এবং আমাদের আধ্যাত্মিক কল্যাণের জন্য।