তারা নামাজেও নিরাপদ নয় — রাজবাড়ীর পাংশায় আহমদিয়া মুসলিমদের ইবাদতের স্থানে বর্বর হামলা।ধর্মীয় স্বাধীনতা কি শুধুই বইয়ের পাতায়?

তারা নামাজেও নিরাপদ নয় — রাজবাড়ীর পাংশায় আহমদিয়া মুসলিমদের ইবাদতের স্থানে বর্বর হামলা।
ধর্মীয় স্বাধীনতা কি শুধুই বইয়ের পাতায়?
এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনার আওয়াজ দিন।

“তারা নামাজেও নিরাপদ নয়”: এক বিবেক-জাগানিয়া বাস্তবতা

৭ এপ্রিল ২০২৫, পাংশা, রাজবাড়ী। সূর্য উঠেছিল প্রতিদিনের মতই, কিন্তু এক শ্রেণির হৃদয় অন্ধকারেই থেকেছে। বহদরপুরে আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের নামাজ কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে চালানো হামলা আমাদের জাতীয় বিবেকের ওপর আরেকটি আঘাত।

আহমদিয়াদের অপরাধ কী?

তাদের অপরাধ—তারা আল্লাহকে ডাকে, রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে, নামাজ পড়ে, এবং শান্তির বার্তা প্রচার করে। অথচ বারবার, ভিন্ন নামে, ভিন্ন অজুহাতে তাদের রক্ত ঝরানো হয়, ঘর পোড়ানো হয়, ইবাদতের স্থান ভাঙচুর করা হয়। আজও তারা নিরাপদ নয়, এমনকি নামাজেও না।

একটি ধারাবাহিক পীড়নের ইতিহাস

পঞ্চগড় থেকে ঢাকা, পাবনা থেকে পাংশা—এই নিপীড়ন নতুন কিছু নয়। আহমদিয়া সম্প্রদায় বহু বছর ধরে বাংলাদেশে নিগৃহীত হয়ে আসছে। তাদের ওপর হামলা হয়, দগ্ধ করা হয় ঘরবাড়ি, নিষিদ্ধ করা হয় ধর্মীয় সম্মেলন। কিছু মানুষ, যারা নিজেরাই আল্লাহর বিধান ভুলে গেছে, তারাই আজ ‘ইমান রক্ষার’ নামে এই বর্বরতা চালায়।

এটা কেবল একটি সম্প্রদায়ের সমস্যা নয়

এই হামলা কেবল আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত নয়—এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় সহনশীলতার ওপর আঘাত। এটি আমাদের সংবিধানের ওপরে লজ্জা, আমাদের নবী (সা.)-এর শিক্ষা ও উদারতার ওপর কালি। আজ যদি এক দল মুসল্লির নামাজে আঘাত আসে, কাল তা অন্যদের ওপরও আসতে পারে।

রাষ্ট্র ও সমাজের দ্বৈত ব্যর্থতা

প্রশাসন যদি চুপ থাকে, বিচার যদি বিলম্বিত হয়, আর সমাজ যদি মুখ ফিরিয়ে থাকে—তবে দোষ কেবল হামলাকারীদের নয়, আমাদের সকলেরই। কারণ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে নিরবতা মানে অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া।

উত্তরণ কোথায়?

উত্তরণ আছে—তবে তা কেবল রাজনৈতিক নিন্দায় নয়, বরং আন্তরিক আত্মসমালোচনায়। আমাদের ঘরে, মসজিদে, বিদ্যালয়ে, মিডিয়ায়—প্রতিটি স্তরে গড়ে তুলতে হবে সহনশীলতা, করুণা ও মানবিকতা।

আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায় এদেশের নাগরিক। তারা দেশের জন্য দোয়া করে, কর প্রদান করে, সামাজিক উন্নয়নে অংশ নেয়। রাষ্ট্রের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো, এবং ইসলামি মূল্যবোধের আলোকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

শেষ কথাটি হৃদয়ে গেঁথে রাখা দরকার

কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন:
“সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।”
আসুন, মানুষকে তার ইবাদতের সময় অন্তত নিরাপদ থাকতে দিই। আজকের এই হামলার নিন্দা করে থেমে গেলে চলবে না—এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, সাহস করে, দয়াবান হয়ে, ন্যায়ের পক্ষ নিয়ে।

আল্লাহর পক্ষ থেকে এই প্রশ্ন আসবেই:
“তোমরা কোথায় ছিলে, যখন আমার নাম ধরা মানুষেরা নির্যাতিত হচ্ছিল?”

আমাদের জবাব প্রস্তুত তো?


Leave a Comment