
✨ জালসা সালানা যুক্তরাজ্য: আত্মিক ঐক্যের বিশ্বব্যাপী আলোড়ন।
✍️ সাঈফুল ইসলাম
পাশ্চাত্যে এক নীরব বিপ্লবের সূচনা (১৯১৩–১৯৬৩)
১৯১৩ সালের জুলাই মাসে, প্রতিশ্রুত মসীহ (আ.)-এর এক নির্ভীক সহচর, চৌধুরী ফতেহ মুহাম্মদ সিয়াল সাহেব, ব্রিটিশ ভূখণ্ডে প্রথম আহমদীয়া মিশনারি হিসেবে আগমন করেন। হযরত খলিফাতুল মসীহ প্রথম (রা.)-এর নির্দেশে তিনি লন্ডনের হাইড পার্কে ইসলামের শান্তির বাণী প্রচার শুরু করেন, যা এক আত্মিক বিপ্লবের সূচনা করে।
খাজা কামালুদ্দীন সাহেবের নেতৃত্বে ওকিং মিশন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শাহজাহান মসজিদে প্রাণ প্রতিষ্ঠা পায়। তবে ১৯২৬ সালে দিল্লির মু’মিনা নারীদের ত্যাগে গড়ে ওঠা ফজল মসজিদ হয়ে ওঠে আত্মিক কর্মধারার এক জীবন্ত কেন্দ্র।
প্রথম জালসা সালানা যুক্তরাজ্য (১৯৬৪)
২৯ আগস্ট, ১৯৬৪—ফজল মসজিদের প্রাঙ্গণে মাত্র ৭০ জন অংশগ্রহণকারীর মাধ্যমে শুরু হয় জালসা সালানার পথচলা। এটি ছিল যেন ভবিষ্যতের আত্মিক রেনেসাঁর শুভারম্ভ। মাওলানা বি.এ. রফিক সাহেবের সভাপতিত্বে ও মাহমুদুল হাসান সাহেবের দিকনির্দেশনায় প্রতিটি পর্ব ছিল ঐক্য, বিনয় ও নিবেদনের প্রতিচ্ছবি।
খেলাফতের হিজরত ও বিশ্বপরিসরে উত্তরণ (১৯৮৪–২০০৪)
১৯৮৪ সালে হযরত মির্জা তাহের আহমদ (রহ.)-এর যুক্তরাজ্যে হিজরতের মাধ্যমে খেলাফতের কেন্দ্র স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইসলামাবাদ (টিলফোর্ড) প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জালসা সালানা এক বিশ্বজনীন আত্মিক সম্মেলনে রূপান্তরিত হয়, যেখানে হুজুর (রহ.)-এর ভাষণগুলো হৃদয় ও বুদ্ধিবৃত্তির আলো জ্বালাতো।
হাদীকাতুল মাহদিতে নতুন দিগন্ত (২০০৫–বর্তমান)
২০০৫ সালে জালসা স্থানান্তরিত হয় হাদীকাতুল মাহদি প্রাঙ্গণে, যেখানে প্রতি বছর ১২০টিরও বেশি দেশ থেকে ৪০,০০০+ আত্মা একত্র হন। এমটিএ’র সরাসরি সম্প্রচার এই মহামিলনমেলাকে পৌঁছে দেয় বিশ্বের প্রতিটি কোণে। হযরত খলিফাতুল মসীহ আল-খামেস (আই.)-এর নির্দেশনায় জালসা আজ বিশ্বশান্তি, আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি ও আত্মিক রূপান্তরের প্রতীক।
粒 নীরব নায়কদের কৃতজ্ঞ স্বীকৃতি
জালসা সালানার সফলতার পেছনে রয়েছে হাজারো স্বেচ্ছাসেবকের নিঃশব্দ ত্যাগ। খাদ্য, নিরাপত্তা, মিডিয়া, শিশু সেবা—প্রতিটি বিভাগেই খুদ্দাম, লাজনা, আতফাল ও আনসার সদস্যদের নিষ্ঠা প্রতিফলিত হয়। বিশেষ করে নারী সদস্যাদের নেতৃত্বগুণ ইসলামি মর্যাদার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।
ইতিহাসের ধারা:
১৯১৩: প্রথম মিশনারি (সিয়াল সাহেব) যুক্তরাজ্যে আগমন
১৯২৬: ফজল মসজিদের উদ্বোধন
১৯৬৪: প্রথম জালসা সালানা যুক্তরাজ্যে
১৯৮৪: খেলাফতের হিজরত
১৯৮৫: জালসা ইসলামাবাদে স্থানান্তর
২০০৫: হাদীকাতুল মাহদিতে জালসা শুরু
২০২৪: ৪৩,০০০+ অতিথি, ১২১টি দেশ
জালসা সালানা: এক অন্তহীন আলোর মিনার
জালসা সালানা আজ কেবল একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান নয়—বরং এটি প্রতিশ্রুত মসীহ (আ.)-এর ঐশী দর্শনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। খেলাফতের নেতৃত্বে, “সবার প্রতি ভালোবাসা, কারো প্রতি ঘৃণা নয়” — এই অনন্য বাণী বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। জালসা আজ আত্মিক ঐক্য, ত্যাগ, এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুত বিজয়ের এক জীবন্ত প্রমাণ।
আসুন, জালসা সালানার এই আলোকরথে সঙ্গী হই—জীবনের দিকে ফিরি আলোর পথ ধরে।
–