গল্প: “আলো জ্বালানো মানুষটা”


রাত বারোটা বাজে।
কুয়াশার চাদরে ঢাকা ধানমণ্ডির এক পুরনো বাসার ছাদে বসে আছে শাওন। পাশে ধোঁয়া ছাড়ছে এক কাপ ব্ল্যাক কফি। আকাশের দিকে তাকিয়ে সে বিড়বিড় করে বলল,
“দাজ্জাল কি ওয়াই-ফাই সংযোগে ঢুকে পড়ে?”

তখনই ছাদের দরজার সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো একটা অদ্ভুত মানুষ—চুলগুলো ঝাঁকড়া, চোখে পুরু চশমা, গায়ে হালকা বাদামি রঙের পাঞ্জাবি। হাতে বই—“মুসলমানদের শেষ যুদ্ধ”।

শাওনের চমকে ওঠা চেহারা দেখে সে বলল,
“ভয় পেয়ো না। আমি তেমন কেউ না। আমি শুধু আলো জ্বালাই।”

—“আলো?”
—“হুম, অন্ধকার যেখানেই ঘন হয়, আমি একটু করে আলো ফেলি। আজ তোমার ছাদে।”

শাওন কিছু বলার আগেই লোকটা বইটা সামনে খুলে ধরল।
—“তুমি জানো, ইব্রাহিম (আ.)-এর আগুন কেন জ্বলে উঠেছিল?”

শাওন মাথা নাড়ল।

—“কারণ, সত্য বলাটা তখন ছিল অপরাধ। আজও তাই। সত্যের পথে হাঁটলে তোমাকে পুড়তে হবে, কিন্তু যদি ঈমান থাকে—আগুন শীতল হয়।”

একটা নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাস ফেলল লোকটা। তারপর বলল,
—“এই যে ‘সাআত’—শেষ যুগ, এটা ভয় পাওয়ার কিছু না। এটা তো সূর্য ওঠার সময়। তুমি চাইলে সেই আলোটা হতে পারো। দাজ্জাল শুধু একটা দানব না, সে একটা দৃষ্টি—যে চোখে শুধু টাকা, লোভ, প্রযুক্তি—কিন্তু নেই আত্মা।”

শাওন প্রশ্ন করল,
—“তাহলে আমরা করব কী?”

লোকটা একটু হাসল, বলল—
“তোমার কলম তুলে নাও। যদি তা না পারো, অন্তত একটি ভালো কাজ করো। কাউকে ক্ষমা করো, মাকে জড়িয়ে ধরো, নামাজে দাঁড়াও। এই যুদ্ধ অস্ত্রের না—এটা আলো আর অন্ধকারের।”

হঠাৎ সে উঠে দাঁড়াল।
—“চলো, আমি যাচ্ছি। আরেক ছাদে আলো দিতে হবে।”

শাওন তখনও স্তব্ধ।

লোকটা নামার সময় হঠাৎ ফিরে বলল,
—“তিবেরিয়াস হ্রদের পানি তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। জানো তার মানে কী?”

—“না।”

—“ভালোবাসা ফুরিয়ে যাচ্ছে। দাজ্জাল শুধু তেল গিলে খায় না, সে মানবতা, দয়া, সরলতাকেও খেয়ে ফেলে। তাই এখন, সত্যিকারের বিপ্লব—আত্মায়।”

ছাদ ফাঁকা হয়ে যায়।
শাওন বইটা হাতে নিয়ে খোলা পাতায় দেখল একটা দাগানো লাইন—
“তুমি যদি আলো না হও, তবে অন্তত একটুখানি ঘন অন্ধকার সরাও।”

রাত বাড়ে।
একটা তারা হঠাৎ কুয়াশা ভেদ করে ঝিকিমিকি করে ওঠে।


শেষ।

1 Comment

  1. Shamsur Rahman's avatar Shamsur Rahman says:

    আলো জ্বালানোর জন্য দুনিয়াতে আল্লাহ তা’লা যাঁকে পাঠিয়েছেন তাঁকে না মানলে
    অন্ধকার দূর হবে না।

    Like

Leave a reply to Shamsur Rahman Cancel reply