
-সাঈফুল ইসলাম
টরন্টো, কানাডা:
এক সময় পাকিস্তান থেকে অত্যাচার এড়িয়ে কানাডায় এসেছিলেন কয়েকজন আশ্রয়প্রার্থী। আজ তাঁরাই গড়ে তুলেছেন এক সমৃদ্ধ ও আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যতের রূপরেখা। কৃতজ্ঞ হৃদয়ে তাঁরা জানেন—এই দেশ তাঁদের শুধু আশ্রয়ই দেয়নি, দিয়েছে বিশ্বাসের স্বাধীনতা, শান্তি আর উন্নতির পথ।
সম্প্রতি টরন্টোতে অনুষ্ঠিত ৪৭তম জালসা সালানা কানাডা-তে উঠে আসে তাঁদের অভাবনীয় অগ্রযাত্রার কথা এবং সামনে এগিয়ে চলার এক সাহসী লক্ষ্য:
আগামী তিন বছরে ১ কোটি ২০ লাখ কানাডীয় নাগরিকের কাছে ইসলামের শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়া।

সম্মেলনজুড়ে ছিল বার্তা—আশীর্বাদ, দায়িত্ব এবং কানাডার প্রতি অকৃত্রিম অঙ্গীকারের।
এক বক্তৃতায় হিজরতের তাৎপর্য তুলে ধরে কোরআনের এই আয়াত উদ্ধৃত করা হয়:
“আর যে আল্লাহর জন্য নিজের দেশ ত্যাগ করে, সে পৃথিবীতে অনেক আশ্রয়স্থল ও প্রাচুর্য পাবে।”
এক বক্তা বলেন:
“আল্লাহর অপার অনুগ্রহে, কানাডা আমাদের দিয়েছে স্বাধীনতা—শুধু বিশ্বাসের স্বাধীনতা নয়, সেই বিশ্বাস প্রচারের স্বাধীনতাও, এই পবিত্র দেশের প্রতিটি কোণে।”

১৯৬৬ সালে কানাডায় জামা‘আতের আনুষ্ঠানিক নিবন্ধনের পর থেকেই শুরু হয় তাঁদের অগ্রযাত্রা।
প্রথম দিকে সংখ্যা ছিল মাত্র দুই—আজ তা ৪০ হাজারেরও বেশি। কেউ কেউ বলেন, সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে।
কানাডার ১০টি প্রদেশ ও নর্থওয়েস্ট টেরিটরির প্রতিটি এলাকায় তাঁদের উপস্থিতি রয়েছে।
২০টিরও বেশি নিজস্ব মসজিদ, অসংখ্য নামাজঘর, গেস্ট হাউস—সবই গড়ে উঠেছে এদেশে।
অর্থনৈতিকভাবে অনেকেই এসেছিলেন খালি হাতে। আজ তাঁরা প্রতিষ্ঠিত—উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী।
এই সমৃদ্ধিকে তাঁরা মনে করেন—আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ।
তবে এই সমৃদ্ধিই তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। বরং এটি একটি উপায়—সত্যিকারের ইসলামের সৌন্দর্য পৃথিবীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
জামা‘আতের খলিফা, হজরত খলিফাতুল মাসীহ (আ.) এই কাজের গুরুত্ব বারবার তুলে ধরেছেন।
এক বক্তা বলেছিলেন:
“সবকিছু নির্ভর করে আপনার মানসিকতার উপর। আপনি যদি বলেন—আমাদের কিছু নেই, তাহলে কিছুই হবে না।
যা আছে তাই নিয়েই সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে।”
এই প্রেরণায় কানাডার জামা‘আত যেই লক্ষ্য নিয়েছে তা অসাধারণ—
আগামী তিন বছরে কানাডার ৩০% মানুষের কাছে, অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের কাছে আহমদীয়া ইসলামের শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
তবে এই প্রচেষ্টা কেবল সংখ্যার খেলা নয়—এটি ইসলামের সৌন্দর্যকে ব্যক্তিগত চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার এক মহান উদ্যোগ।
“আমরা ইসলামের শিক্ষা প্রদর্শন করি—আমাদের নৈতিকতা, আচরণ ও সদাচরণের মাধ্যমে।”
জামা‘আতের ভেতরে চলছে আত্মসমালোচনার চর্চা—
কারণ তাঁরা জানেন, প্রকৃত সাফল্য কেবল সংখ্যা বা স্থাপনার মাঝে নয়,
বরং তা লুকিয়ে থাকে চরিত্রে, পারিবারিক বন্ধনে এবং ব্যক্তিগত পরিশুদ্ধতায়।
বক্তৃতায় উঠে আসে,
“সংখ্যা হয়তো দুনিয়াকে চমকিত করতে পারে, কিন্তু আল্লাহ সন্তুষ্ট হন চরিত্রে।”
আজকের সমাজের নানা চ্যালেঞ্জ—যেমন বিবাহবিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি, উপার্জনের স্বচ্ছতা—এসবের মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে এক আভ্যন্তরীণ বিপ্লবের ডাক।
“সত্যিকারের রূপান্তর শুরু হয় ঘরের ভেতর থেকে।”
এই দায়িত্ব কেবল কানাডার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
জামা‘আতের কেন্দ্রের নির্দেশে কানাডা জামা‘আত আজ নেতৃত্ব দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণেও।
ক্যারিবিয়ান, মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার নয়টি দেশে গড়ে উঠেছে নতুন জামা‘আত।
কিছু জামা‘আত আজ স্বনির্ভর, আর কিছু এখনো কানাডার সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে।
আর যখন সামনে এগিয়ে আসছে ৫০তম জালসা সালানা কানাডা, তখন জামা‘আতের দৃষ্টি আরও গভীরে:
“আল্লাহ করুন, আমরা যেন কেবল বলেই না যাই—পঞ্চাশ বছর টিকে আছি। বরং বলার মতো কিছু অর্জনও থাকুক।
পরিবারে, চরিত্রে, আর দেশের সেবায় যেন ফুটে ওঠে আমাদের প্রকৃত রূপান্তর।”
আল্লাহর নির্ধারিত ও পবিত্র নেতৃত্বের অধীনে, কানাডার আহমদীয়া মুসলিম জামা‘আত ইসলামকে রূপ দিয়েছে সেবায়, প্রেমে, শান্তিতে—
আর সেই আলো ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে, নিঃশব্দ এক বিপ্লবের মতো।
মাশাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তা’লা কানাডাবাসী আহমদী ভাইদের ইচ্ছা পূর্ণ
করুন। জাজাকুমুল্লাহ।
LikeLike