তাওহীদের আলোয় নৈতিকতার পুনর্জাগরণ

-সাঈফুল ইসলাম

যখন পৃথিবী “ঈশ্বর ছাড়া নৈতিকতা” নামের এক নতুন বিশ্বাসে মগ্ন, তখনও মানবসভ্যতার ইতিহাস নীরবে স্মরণ করিয়ে দেয়
নৈতিকতার প্রকৃত শিকড় ধর্মে নয়, বরং তাওহীদের হৃদয়ে।

তাওহীদ — আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস — কেবল একটি মতবাদ নয়; এটি মানব নৈতিকতার আত্মা, বিবেকের জাগরণ, আর জীবনের অন্তঃস্থ দিশা।
এই বিশ্বাস ব্যতীত মানবতা দিকহারা হয়ে পড়ে, আর নৈতিকতা হয়ে যায় স্বার্থের দাস।



🌙 সূরা আল-আসর — মানব নৈতিকতার ঈশ্বরীয় নকশা

সূরা আল-আসর (১০৩:১–৩)-এ আল্লাহ ঘোষণা করেছেন —
মানবজাতি “ক্ষতির মধ্যে নিমগ্ন”, ব্যতীত তাদের,
যারা চার গুণে পরিপূর্ণ: ঈমান, সৎকর্ম, সত্যে উপদেশ ও ধৈর্যে উপদেশ।

প্রথমেই এসেছে ঈমান — কারণ বিশ্বাসই সেই মূল, যেখান থেকে সকল নৈতিকতার বৃক্ষ জন্ম নেয়।
এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস কেবল মুখের উচ্চারণ নয়; এটি এক জীবন্ত শক্তি, যা চিন্তাকে শুদ্ধ করে, বিবেককে জাগ্রত করে,
আর প্রতিটি কর্মে নৈতিক উদ্দেশ্যের প্রাণসঞ্চার করে।



⚖️ তাওহীদ — আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তি

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” — এই বাক্য কোনো আচার নয়, এটি এক মুক্তির ঘোষণা।
যে ব্যক্তি এক আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস ঘোষণা করে, সে আসলে সকল দাসত্ব থেকে মুক্তি ঘোষণা করে।

ঈশ্বরহীন জীবনে মানুষ হয়ে যায় বহু প্রভুর দাস —
অর্থের, খ্যাতির, ক্ষমতার, বা অহংকারের।
যে সমাজে ঈশ্বর নেই, সেখানে মানুষ একে অপরের ক্ষুদ্র দেবতা হয়ে ওঠে,
এবং সেখান থেকেই জন্ম নেয় অন্যায়, বৈষম্য ও অবিচার।

কিন্তু তাওহীদ মানুষকে একক প্রভুর অনুগত করে।
তখন সে ভয় পায় না কোনো মানবশক্তিকে, বরং অনুভব করে এক সর্বজ্ঞানী ও সর্বদর্শী সত্তার উপস্থিতি।
এই বিশ্বাস মানুষকে ভ্রাতৃত্ব ও সমতার বন্ধনে আবদ্ধ করে,
মুছে ফেলে বর্ণ, জাতি, রঙ বা অবস্থানের বিভাজনরেখা।

তাওহীদের নৈতিকতা শেখায় —
সব মানুষ আল্লাহর সামনে সমান, আর ন্যায়ই হলো সত্য বিশ্বাসের পরিচয়।



🕊️ ধর্মহীন নৈতিকতার সংকট

আধুনিক সমাজে “সেক্যুলার হিউম্যানিজম” এক নতুন স্লোগান তুলেছে —
ঈশ্বর ছাড়া নৈতিকতা।

কিন্তু এই ধারণা স্থায়ী নয়; এটি সমাজের মেজাজ অনুযায়ী বদলে যায়।
আজ যা ভালো, কাল তা মন্দ; আজ যা নীতি, কাল তা হাস্যকর।
এভাবেই ঈশ্বরহীন নৈতিকতা হয়ে পড়ে এক অস্থায়ী সামাজিক রীতি,
কোনো চিরন্তন নীতি নয়।

মানুষের আইন বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিন্তু হৃদয়ের গভীর ইচ্ছাকে পরিবর্তন করতে পারে না।
আইন অপরাধীর হাত থামাতে পারে, কিন্তু অন্তরের অন্ধকার মুছতে পারে না।
অন্যদিকে ঈশ্বরভীতি সেই অন্তরকে আলোকিত করে —
কারণ বিশ্বাসী জানে, তার প্রতিটি কাজ ও উদ্দেশ্য এক সর্বজ্ঞ সত্তার দৃষ্টিতে প্রকাশ্য।

এই উপলব্ধিই নৈতিকতার বাস্তব প্রেরণা।
যেখানে ঈশ্বর নেই, সেখানে ভয় থাকে পুলিশের;
কিন্তু যেখানে ঈশ্বর আছেন, সেখানে ভয় হয় নিজের বিবেকের।



🌍 তাওহীদ — ন্যায়ের চিরন্তন ভিত্তি

তাওহীদ হলো নৈতিকতার সূর্য, যার আলো ছাড়া সমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।
এটি মানুষের মনে জাগায় ঈশ্বরভীতি, যা জাগতিক ভয়কে দূর করে।
এটি সৃষ্টি করে ঐক্য, দূর করে বিভাজন,
এবং প্রতিষ্ঠা করে এমন মূল্যবোধ, যা সময়ের স্রোতে কখনও ক্ষয়ে যায় না।

ঈশ্বর ছাড়া ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা নেই,
কেবল আইন দিয়ে মানুষের অন্তরকে শুদ্ধ করা সম্ভব নয়।
ন্যায়, সততা ও মানবিকতা কেবল তখনই স্থায়ী হয়,
যখন তা প্রতিষ্ঠিত হয় তাওহীদের শাশ্বত ভিত্তির ওপর।

তাওহীদই মানবতার নৈতিক পুনর্জাগরণের সূর্য —
যা মানুষের অন্তরে জাগায় বিবেকের ভয়,
হৃদয়ে জ্বালায় আলোর প্রদীপ,
আর সমাজকে ফিরিয়ে আনে ন্যায় ও সত্যের পথে।

1 Comment

  1. Shamsur Rahman's avatar Shamsur Rahman says:

    সুন্দর লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

    Like

Leave a Comment